শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে!

মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে!

মোঃ শহিদুল্লাহ্: এই দেড় মাস আগে বাংলা একাডেমি আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুখরিত ছিল মানুষের প্রাণস্পন্দনে, বসেছিল বাঙালির প্রাণের মেলা একুশে বইমেলা৷ সে বই মেলায় ছিল বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের নান্দনিক স্টল৷ থরে থরে সাজানো ছিল বিভিন্ন ধরনের বই৷ এ বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছিল গ্রন্থ কুটির প্রকাশনী থেকে আমার লেখা “এক পুলিশের না বলা গল্প” জৈবনিক উপন্যাসটি৷ ১৮ ফেব্রুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপন্যাসটির মোড়ক উন্মোচন করেছিলেন দিনাজপুর-১ আসনের মাননীয় সংসদ জনাব মনোরঞ্জন শীল গোপাল আমার পরিবারের সদস্যরাও আমার সাথে ছিল৷ আমি শেষ দিন পর্যন্ত মেলায় হাজির ছিলাম৷ বেশ আনন্দেই কেটেছিল দিনগুলো৷ বইমেলা শেষে নিজের ঠিকানায় ফিরে এসেছিলাম মনে অনাবিল প্রশান্তি নিয়ে৷ এর মাঝেই ঘটল ছন্দপতন, অশান্তির এক ডামাডোল বেজে উঠল চারিদিকে ৷ করণা নামের অনুজীব ভাইরাস হঠাৎ করেই নিজের উদ্ভব ঘটিয়ে আগ্রাসন চালাতে শুরু করল বিশ্বব্যপী ৷ঘটনার বিবরন এমন যে ৩১শে ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে বিষয়টি জানায়৷ এই রোগে ১১ই জানুয়ারি সর্বপ্রথম একজন মানুষের মৃত্যু ঘটে।
কীভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেনি কোন বিশেষজ্ঞ৷
তবে খুব সম্ভবত কোন প্রাণী এই ভাইরাস জনিত রোগের উৎস ছিল।প্রাণী দেহ থেকেই প্রথম ভাইরাসটি উহান শহরের যে কোন মানুষের শরীরে ঢুকেছে, এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে বলে সবার ধারণা৷
এর আগে গবেষণায় পাওয় যায় যে সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকে। মার্স ভাইরাস আসে উট থেকে।
করোনা (কোভিড-১৯)রোগ ছড়ানোর পিছনে
চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজারে গিয়েছিল এমন লোকদের সম্পর্ক আছে বলে বিশেষজ্ঞ মহল ধারণা করছেন।
ওই বাজারে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো
বেলুগা ও তিমি জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণী করোনা ভাইরাস বহন করতে পারে বলে ধারনা অনেকের। উহানের ওই বাজারে জীবন্ত মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, এবং সাপও বিক্রি হতো।
তাদের থেকেও এই নতুন ভাইরাস এসে থাকতে পারে মর্মে ধারনা পোষণ করা হয়৷
এই রোগটি বর্তমানে মহামারীর আকার নিয়েছে এটা এখন বৈশ্বিক মহামারী৷ চীনের পর ইরান, ইতালি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া আমেরিকা সহ ২০৮ টি দেশে এ রোগের সংক্রমণ ঘটেছে৷চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল৷
বাংলাদেশও এই ঘাতক ব্যাধির বিষাক্ত ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি৷
বাংলাদেশে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ২৭ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, আক্রান্ত ৪২৪ জন আর হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন অনেকেই৷প্রথম দিকে আমাদের দেশে এ রোগের সংক্রমণ ছিল না৷বিদেশ ফেরত কিছু অপরিণামদর্শী ব্যক্তি নিজ শরীরে ঘাতক এই রোগ নিয়ে প্রবেশ করার পর থেকেই এ রোগের বিস্তার চারিদিকে প্রসারিত হচ্ছে৷ যেহেতু এ রোগের কোন প্রতিষেধক আজও আবিষ্কৃত হয়নি তাই প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর ধারণাকে সামনে রেখে রোগগ্রস্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে সুস্থ মানুষদের সরিয়ে রাখার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে৷ এরই প্রেক্ষিতে সন্দেহজনক অসুস্থ্য ব্যক্তিকে রোগ শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷ অনেকে কোয়ারেন্টিনে আছেন যাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ সমগ্র বিশ্ব প্রতিদিন নতুন নতুন দৃশ্যপট অবলোকন করছে৷ বিশ্ব আজ এই অনুজীব করোনা ভাইরাসের কাছে অতি অসহায়, বদলে গেছে সমস্ত বিশ্ববাসীর দৈনন্দিন জীবন৷যাত্রা প্রতিদিন ঘুম ভাঙতেই দেখতে পাচ্ছে চারিদিকে শুধু লাশের মিছিল৷ আজ তাই আমাদের সামনের সব কিছু যেন এক অশনি সংকেত৷সমগ্র বিশ্ব করোনার বিরুদ্ধে একযোগে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে৷ অথচ কয়েক মাস আগেও সমগ্র বিশ্ব এমন এক নাজুক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল না৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং তথ্য প্রযুক্তির এমন উৎকর্ষতার সময় মানুষকে যে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে তা আদৌ কেউ ভাবতে পেরেছিল কি? দিনে দিনে নাজুক হচ্ছে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, তৈরি হচ্ছে দারুন মানবিক সংকট৷ ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশের এমন অসহায়ত্ব দেখতে হবে তা ছিল কল্পনার অতীত৷ বিগত একশত বছরে ইউরোপে এমন ঘটেছে বলে প্রমাণ মেলে না৷ ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ইতালি ইংল্যান্ড সহ ক্ষমতাধর বিভিন্ন দেশ একের পর লক ডাউনের শিকার হচ্ছে৷ রেস্তোরাঁ ক্যাফে মিউজিয়াম সিনেমা হল ইত্যাদির সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে একে একে সব বন্ধ হচ্ছে৷ বন্ধ হয়ে গেছে পরস্পর করমর্দন এবং আলিঙ্গনের মত ঘটনা৷ গ্লোবাল মহামারীর হাত থেকে বাচার জন্য যা করা দরকার তা করার চেষ্টা করছে সবাই কিন্তু লাভ হচ্ছে কতটুকু? যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কোনদিন অস্ত যায়না সে সাম্রাজ্যের রানীও করোনার ভয়ে স্কটল্যান্ডে পালিয়েছেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি৷ সেখানেও তিনি করোনা পজিটিভ৷ চারিদিকের মানুষ দারুণভাবে আতঙ্কিত, এমন আতঙ্ক বিশ্ববাসী এর আগে দেখেনি যা দেখলো ২০২০ সালে৷ যখন চীনে এই ভাইরাস প্রথম আঘাত করে তখন সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য চীন লকডাউন করলে অনেকে সেটাকে নিয়ে অনেক ট্রল করেছে, কিন্তু নিজেদের মধ্যে সাবধানতা অবলম্বন করেনি৷ কিন্তু যখন ভাইরাসটি এক দেশের সীমানা ছেড়ে অন্য দেশে ঢুকে সবাইকে একের পর এক সংক্রমিত করতে শুরু করলো তখন সবাই দিশেহারা হয়ে পড়লো৷ তারাও একের পর এক লকডাউন করতে বাধ্য হল৷ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিজ্ঞানী এবং এ বিষয়ে এক্সপার্ট দের কাছ থেকে মতামত ও পরামর্শ নিয়েছেন৷কিন্তু তিনিও এখন করোনা পজেটিভের রোগী, রয়েছেন ইনটেনসিভ কেয়ারে৷
গ্রেট বৃটেনের জনগণ করোনা ভাইরাসের প্রভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে তা পুষিয়ে উঠতে দেশটির চ্যান্সেলর ৩৩০ বিলিয়ন পাউন্ডের বেইলআউট করেছেন। কভিড-১৯ সব বিশ্ব নেতাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে৷বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করছেন, কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের বিষয় করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি৷ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা দিনরাত গবেষণা চালিয়েও কোন কূলকিনারার নাগাল এখনো পাননি;প্রকৃত প্রস্তাবে বিষয়টি হলো এমন একটি পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য গোটা বিশ্ব আদৌ প্রস্তুত ছিল না৷ সুতরাং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৃশ্যপট দেখা ছাড়া বর্তমান প্রেক্ষাপটে গত্যন্তর কি ?শুধু চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই৷ অধুনা মানুষ যখন মঙ্গল গ্রহে তার বাড়ি বানানোর কথা ভাবছে ঠিক সেই মুহূর্তে এমন একটি বৈশ্বিক মহামারী সবার কাছে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত৷বিশ্ব ¯হা¯হ্য খাত অবহেলিত আর তাই এমন বর্তমান পরি¯িহতি৷
আমাদের দেশও নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে৷ করোনা পরিস্থিতি হঠাৎ করেই আমাদের দেশে এসে পড়বে তা কেউ ভাবেনি৷ কিন্তু সেই সে অপরিণামদর্শীদের কথা যা আগে বলেছি তাদের কথা আবারো বলতেই হয়-যারা জেনেশুনেও ঘাতক ভাইরাস সাথে করে এনে এদেশে প্রবেশ করেছে৷এয়ারপোর্টে সর্তকতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও জ্বর শরীরে দুই-তিনটি প্যারাসিটামল খেয়ে তার জ্বর গোপন করে এদেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন তার পরেও তারা কোয়ারেন্টনটন মানেননি৷ ঘাতক ভাইরাস সাথে করে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন মুক্ত বিহঙ্গের মত৷ ফলে যা হবার তাই হয়েছে৷ বারবার সামাজিক দূরত্ব মানার কথা বললেও কেউ তা মানছে না৷সরকার ঢাকা শহরে থাকবার জন্য সব অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করলেও সবায় তাকে ঈদের ছুটি জ্ঞানে দল বেধে মনের আনন্দে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে গেছে ৷আবার কাজে যোগদানের কথা বলে সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখে পায়ে হেঁটে ঢাকা শহরে এসে জটিলতার পরিমাণ যথেষ্ট পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে৷ সরকার একের পর এক জেলা লকডাউন ঘোষণা করছেন৷তার পরেও দেশে করণায় মৃতের সংখ্যা ২৭ করনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ৪২৪ জন যা আরও বাড়বে সন্দেহ নেই৷ সরকার আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েছে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩১ দফা নির্দেশনা প্রদান করে সবাইকে তা মেনে চলতে বলেছেন৷

তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে যার যার বাসায় অবস্থান করতে হবে৷ মানুষের জীবন একটাই৷ অন্যের ভুলের খেসারত দিতে গিয়ে কেন নিজের মূল্যবান জীবনকে বিসর্জন দিতে হবে? কেউ যদি আইন না মানতে চায় প্রচলিত আইন প্রয়োগ করে তাকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে৷এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বজার রাখতে সবাইকে বাধ্য করতে সেনাবাহিনী পুলিশ মাঠে নেমেছে৷ তার পরেও পরি¯িহতি ভয়াবহ৷ সারা পৃথিবীতে মৃত্যু লক্ষাধিক যা রাবারের মত প্রতিদিন সম্প্রসারিত হচ্ছে৷ মহা মূল্যবান জীবন অকালে কেই বা হারাতে চাই?এখনও সময় আছে সব নিয়ম মেনে চললে একদিন নিশ্চয়ই সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাবে৷আমি বা আমরা কেউ চাই না অকাল মৃত্যু৷ আর তাই নিজে ঠিক থাকব আর অন্যকেও ভাল রাখব-আর তাহলেই কবির সেই অমর কথা ” মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই” কথাটার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবে৷

লেখক: পরপর ১৩ বার ডিআইজি রিওয়ার্ড প্রাপ্ত বাংলাদেশ পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (অবঃ), জৈবনিক উপন্যাস সহ বিভিন্ন বিষয়ের লেখক ও আইন বিশ্লেষক। মোবাইলঃ-০১৭৪০৩০০৬০০

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel